
২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের ঝটিকা সফর শেষে বুধবার দুপুরে ঢাকা ছেড়ে গেছেন সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান আল সাউদ। এই সফরে দুই পক্ষের মধ্যে বৈঠক শেষে দুইটি বিষয়ে সমাঝোতা স্মারক সই হয়েছে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বাংলাদেশি হজ যাত্রীদের জন্য ভিসা ক্লিয়ারেন্সের শতভাগ কার্যক্রম ঢাকায় শেষ করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবেন বলে জানিয়েছেন সৌদি মন্ত্রী। অন্যদিকে, আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক ইস্যূতে শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে ঢাকা-রিয়াদ সম্পর্ক আরো করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন সৌদি মন্ত্রী।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান আল সাউদ বুধবার সকালে রাজধানীর এক অভিজাত হোটেলে বৈঠক করেন। তার আগে সফররত সৌদি মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেষ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান আল সাউদ সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে সৌদি আরব গর্বিত। সামনের দিনে দুইপক্ষের সম্পর্ক এগিয়ে নিতে আমরা বেশ আশাবাদী। আজকের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে চমৎকার আলোচনা হয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে দুই দেশের ভবিষ্যৎ রূপকল্প নিয়ে আমাদের সম্পর্ককে আরো ঘনিষ্ট করা। আমরা বিশ্বাস করি, নিজেদের অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গণেও আমরা একসঙ্গে কাজ করতে পারি। সৌদি আরবের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে বাংলাদেশে কয়েকশ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে। আমরা শক্তিশালী ভিত্তির ওপর আরও ব্যাপকতর অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠার বিষয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ।
বিশ্বে চলমান জ্বালানি তেলের সঙ্কট নিয়ে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান আল সাউদ বলেন, ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে বিশ্বে তেল সরবরাহের বিষয়ে কোনো উদ্বেগ নেই। আমি যা বলতে পারি, তা হলো আমরা একটি স্থিতিশীল তেলের বাজারের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ঢাকা-রিয়াদ দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক শেষে উভয়ের মধ্যে শুল্ক খাতে সহযোগিতা বাড়াতে চুক্তি এবং বাংলাদেশের ফরেন সার্ভিস একাডেমি ও বাদশা ফয়সাল ইনস্টিটিউটের মধ্যে সহযোগিতা স্মারক সই করেছে বাংলাদেশ ও সৌদি আরব। ঢাকার পক্ষে চুক্তি ও স্মারক সই করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। সৌদি আরবের পক্ষে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান আল সাউদ সই করেন।
বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, হজে যারা যাবেন, তারা যেন এ দেশে সহজে ভিসা করে যেতে পারেন সে বিষয়ে আমরা বলেছি, যেন হয়রানি কম হয় তাদের। এ বিষয়ে সৌদির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, শতভাগ ভিসা ক্লিয়ারেন্স যেন বাংলাদেশে হয়, সেজন্য তারা সহযোগিতা করবেন। সব কার্যক্রম এখানে হলে কোনো হয়রানি হবে না। এতে আমাদের হাজিরা খুব খুশি হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, প্রথমবারের মতো দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক সংলাপ হলো। সৌদি আরব নিজের দেশের পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যে পরিবেশবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির জন্য পাঁচ হাজার গাছের চারা লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে এক হাজার সৌদি আরবে লাগানো হবে, বাকিটা মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলোতে। এখানে আমরা তাদের সঙ্গে অংশীদারত্ব প্রতিষ্ঠা করতে আগ্রহী। আমরা গাছও দিতে চাই। গাছের পরিচর্যা, রক্ষণাবেক্ষণে কাজ করতে আমরা আগ্রহী।
দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক খাত শক্তিশালি করা প্রসঙ্গ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলে সৌদি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে আমরা সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়ার কথা বলেছি। এর মধ্যেই ২০টি প্রতিষ্ঠান আগ্রহ দেখিয়েছে। শিগগিরই এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।
তিনি আরো বলেন, প্রতি বছর ২৬৫ জন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেয় সৌদি আরব। তবে মাত্র ৮০ জন শিক্ষার্থী যায়। কোটা কেন পূরণ হয় না, এ বিষয়ে আমরা আলাপ করেছি।
সময়েরআলো
