
কূটনৈতিক প্রতিবেদক,সময়েরআলো:ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সারাবিশ্বে জ্বালানি সঙ্কট চলছে। যার প্রভাব বাংলাদেশের জ্বালানি খাতেও পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আনতে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা চলছে। বাংলাদেশে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্ডার মান্টিটস্কি বলেন- এই বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।
বুধবার ‘ইউক্রেনে বিশেষ মিলিটারি অভিযানের ছয় মাস: ফলাফল ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক এক গোল টেবিল বৈঠক ঢাকায় অবস্থিত রাশিয়ান দূতাবাস আয়োজন করে। ওই গোল টেবিল বৈঠকে রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্ডার মান্টিটস্কি বলেন, ‘ইউক্রেনে রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞার পর বিশ্ববাসী একাধিক সঙ্কটের মোকাবিলা করছে। যুক্তরাষ্ট্রের কারণে গোটা বিশ্ব খাদ্য, জ্বালানি, সারসহ একাধিক খাতে সঙ্কটের মোকাবিলা করছে। যে কারণে বাংলাদেশও সঙ্কটের মোকাবিলা করছে। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বে একক নিয়ন্ত্রণ বহাল রাখতে চায় কিন্তু চীন, ভারত, রাশিয়াসহ বিশ্বের অন্য দেশগুলো একক নিয়ন্ত্রণের পক্ষে না, সকলেই এই বিষয়ে বহুমুখী বিশ্ব ব্যবস্থা চায়। রাশিয়া একক নয় বহুমুখী বিশ্ব ব্যবস্থায় বিশ্বাস করে।’
রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্ডার মান্টিটস্কি বলেন, ‘সঙ্কট মেটাতে বাংলাদেশ রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল, গম, সার আনার জন্য দুইপক্ষের মধ্যে আলোচনা চলছে। যা একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়া দুইপক্ষের মধ্যে কোন মুদ্রায় বাণিজ্য হবে, সে বিষয়েও আলোচনা চলছে।’
এদিকে, রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল সংগ্রহের বিষেয়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন গত ১৬ আগস্ট পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাশিয়ান ক্রুড অয়েল পরিশোধন করতে ভারতের যে সক্ষমতা আছে আমাদের তা নাই। আমরা যদি এই সক্ষমতা তৈরি করতে পারি তাহলে রাশিয়ার কাছ থেকে ক্রুড অয়েল নিতে পারব কিন্তু সেটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। আমাদের পরিশোধন ব্যবস্থা হালনাগাদ করতে সামনে কয়েকজন বিশেষজ্ঞ আমাদের এখানে আসবে। যেহেতু আজকে (গত ১৬ আগস্ট) প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশণা এসেছে তাই আমরা অন্য মন্ত্রণালয়গুলোর সাথে সমন্বয় করে এই বিষয়ে ব্যবস্থা নিব এবং আমাদের যে পসিবিলিটি আছে তা এক্সপ্লোর করার উদ্যোগ নিব।’
রাশিয়ার কাছ থেকে তেল নিতে কূটনৈতিক কোনো সমস্যা আছে কি না, জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘বিশ্বের অনেকেই নিচ্ছে, অনেকে তৃতীয় দেশের মাধ্যমে নিচ্ছে। যেহেতু আমাদের পরিশোধন সংক্রান্ত লিমিটেশন আছে, যেটা আমি শুনেছি, এটা আমরা ওভারকাম করতে পারলে অন্য দেশগুলো যেভাবে নিচ্ছে আমরাও সেভাবে নিতে পারি।’ সেক্ষেত্রে বাণিজ্য লেনদেন কোন পদ্ধতিতে হবে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেটা বাংলাদেশ ব্যাংক ঠিক করবে।’
রাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা আছে। বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের অন্যতম বাজার হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন। সেক্ষেত্রে রাশিয়া থেকে জ্বালানি সংগ্রহ বাংলাদেশের রপ্তানি কোনো ঝুঁকিতে পড়বে কি না। জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘তেমন ঝুঁকি দেখা দিলে সেখান থেকে না এনে বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নিতে হবে। যেমন মধ্যপ্রাচ্যের সবগুলো দেশের সাথে আমাদের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। সৌদি রাষ্ট্রদূতও গত সপ্তাহে প্রেস কনফারেন্সে জানিয়েছে যে তারাও এই বিষয়ে সহযোগিতা করতে রাজি আছে। কাতারের সাথেও আমাদের সম্পর্ক ভালো আছে। সুতরাং আমাদের অনেক অপসন আছে।’
এফএইচ
