
বাঁশের চোঁচ, নারিকেলের কাতা (ছোবড়া) পাটের আঁশ, ধানের বিছালী, খেজুর গাছের আঁচা (ফাতরা) ও খড়কুটার মতো ফেলে দেওয়া জিনিস দিয়ে গৌরাঙ্গ দাসের নিপুণ হাতে গড়ানো বিভিন্ন ডিজাইনের শোপিচ দেশের সীমানা ছাড়িয়ে রফতানি হচ্ছে ইউরোপের ৭টি দেশে।
একটি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় এসব পণ্য রফতানি সম্ভব হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। সরকারি সহযোগিতা পেলে গৌরাঙ্গ দাসের তৈরি বিভিন্ন হস্তশিল্প পণ্য বিদেশে রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
আরও সংবাদ পড়ুন >>২০ হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ হয়েছে টিকার জন্য : স্বাস্থ্যমন্ত্রী
দেশের অন্য আর পাঁচজনের মতো সম্মানের সঙ্গে মাথা উঁচু করে বাঁচার স্বপ্ন দেখেন এই হস্তশিল্পের কারিগর। যশোর সদর উপজেলার ১৪ নম্বর নরেন্দ্রপুর ইউনিয়নের চাউলিয়া দাসপাড়ার বাসিন্দা মেধাবী হস্তশিল্পী গৌরাঙ্গ দাস।
সরেজমিনে তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বেলজিয়াম থেকে অর্ডার পাওয়া বিভিন্ন ডিজাইনের ভিন্ন ভিন্ন নামীয় পাখির বাসাসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরিতে কর্মব্যস্ত গৌরাঙ্গ দাস তার স্ত্রী সন্তানসহ আরও ৮ জন কারিগর। গৌরাঙ্গ দাসের হস্তশিল্প এ কারখানায় এলাকার আশপাশ থেকে আসা অন্তত আটজন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করে। দিনে এরা ৫শ থেকে ৮শ টাকা পর্যন্ত আয় করে।
আরও সংবাদ পড়ুন >>১৩ ইটভাঁটা বন্ধ করে দিল পরিবেশ অধিদফতর
গৌরাঙ্গর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাঁশের চোঁচ, ছন, বিচালী, খড়কুটা, খেজুরের আঁচা ইত্যাদি ফেলে দেওয়া জিনিস দিয়ে বিশেষ কায়দায় তৈরি করছে হাতে বুনা বিভিন্ন ডিজাইনের পাখির বাসাসহ নান্দনিক সব শোপিচ। গৌরাঙ্গ দাস শুধু পাখির বাসায় তৈরি করেন না, তিনি তার দুচোখে যা দেখেন অথবা কেউ যদি ছবি তুলে বা ক্যাটালগ দেখিয়ে কিছু বানিয়ে দিতে বলেন হুবহু সেভাবেই গড়িয়ে দিতে পারেন নিমিষেই। তার তৈরি দৃষ্টিনন্দন ও মুগ্ধকর শোপিস যে কারোরই মন ছুঁয়ে যাবে। তার তৈরিকৃত শোপিচগুলোর মধ্যে অন্যতম বাঁশের চাটই বা চাঁচ দিয়ে বিশেষভাবে বানানো নৌকা, ছনের কুঁড়েঘর, ফুলদানিসহ নান্দনিক ডিজাইনের খেলনা সামগ্রী। করোনা মহামারির আগে তার এই হস্তশিল্প পণ্য রফতানি হতো অস্ট্রেলিয়া, হলান্ড, পর্তুগাল, জার্মান, নিউজিল্যান্ড ও বেলজিয়ামের মতো দেশে।
জানা যায়, এ দেশগুলোয় হস্তশিল্প পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। যা করোনা মহামারিতে থমকে গেছে। গৌরাঙ্গ দাস ১৯৮৬ সাল থেকে বাঁশ ও বেত দিয়ে ডালা, ঝুড়ি, কুলো, ঢামা, চালন, মাছ ধরা পোলো ইত্যাদি সব গৃহস্থালির আসবাবপত্র তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। আধুনিকতার বদৌলতে এখন এসব জিনিসের কদর না থাকায় বাপ-দাদার পেশা না পাল্টে মানুষের চাহিদা বিবেচনায় পণ্য তৈরিতে ভিন্নতা এনে দৃষ্টিনন্দন বিভিন্ন শোপিচ তৈরি করে আসছিলেন। কিন্তু করোনা মহামারির ধকল কাটতে না কাটতেই ফের নতুন মাত্রায় স্থবিরতা গোটা বিশ্ব। থেমে যাচ্ছে তার তৈরি হস্তশিল্প পণ্য রফতানিও।
