মাদকদ্রব্য কেনাবেচা করাও হারাম

মানুষের জীবন ধ্বংসের অন্যতম উপাদান মাদকদ্রব্য। আরবিতে মদকে বলা হয় ‘খামরুন’, যার অর্থ বিলুপ্ত করা, লুকিয়ে ফেলা। মদ যেহেতু মানুষের বুদ্ধি-বিবেক বিলুপ্ত করে দেয়, তাই এই নামকরণ। আল্লাহ তায়ালা কোরআনে মদপানকে শয়তানের কার্যাবলির অন্তর্ভুক্ত বলে উল্লেখ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার বেদি ও ভাগ্য নির্ণায়ক শর (ইত্যাদি) হলো ঘৃণ্য বস্তু ও শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা তা বর্জন করে চলো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো।’ (সুরা মায়েদা : ৯০-৯১)।

ইসলাম চিরসুন্দর ও পবিত্র জীবনবিধান। এই ধর্মের অনিন্দ্য সুন্দর বৈশিষ্ট্য হলো- এতে মানুষের জন্য ক্ষতিকর বস্তুগুলো নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে এবং সেটার প্রতিরোধ কৌশলও শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। যেসব বিষয় মানুষকে উপকৃত করে, পার্থিব ও পরকালীন জীবনে কল্যাণ বয়ে আনবে, সেসব বিষয়ে রয়েছে বৈধতা। আর ক্ষতিকারক সব বিষয়ে এসেছে নিষেধাজ্ঞা। ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সব ক্ষেত্রে রয়েছে উত্তম দিকনির্দেশনা। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ইসলাম মদের বিষয়ে অবৈধতার নির্দেশনা জারি করেছে। কেননা মাদক বা নেশাজাতীয় দ্রব্য মানুষের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। আল্লাহ তায়ালা মাদকের প্রতি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বলেন, ‘নিশ্চয়ই শয়তান মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চার করতে চায়। আর চায় আল্লাহর স্মরণ ও সালাত থেকে তোমাদের বাধা দিতে। অতএব তোমরা কি বিরত হবে না?’ (সুরা মায়েদা : ৯১)।

ইসলামী ফিকহের বিশেষজ্ঞদের মতে, এ আয়াতের মাধ্যমে মাদকদ্রব্য পান করা ও কেনাবেচাসহ যাবতীয় কর্মকাণ্ড হারাম হয়েছে। তা ছাড়া মাদকদ্রব্য নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে অসংখ্য হাদিস বর্ণিত হয়েছে, মহানবী (সা.) বলেন, ‘সব নেশাদ্রব্য হচ্ছে মদ আর সব ধরনের মদ হারাম’ (মুসলিম : ২০০৩)। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, ‘মদ অল্প হোক কিংবা বেশি সবই হারাম। আর নেশাজাতীয় সব দ্রব্য হারাম।’ (সুনানুল কুবরা : ৫১৭৩)।

ইসলামের অনন্য আরেকটি সৌন্দর্য হচ্ছে, মাদকবস্তু শুধু নিষেধ করার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেনি। বরং সঙ্গে সঙ্গে বেচাকেনা, উৎপাদন ও ব্যবসা, বাণিজ্য সবকিছুই নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত করেছে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘মদ হারাম হওয়ার আয়াত নাজিল হলে কতক সাহাবি জিজ্ঞেস করেন হে আল্লাহর রাসুল! আমরা নিজেরা পান থেকে বিরত থাকি, কিন্তু অর্থের প্রয়োজনে বেচাকেনাও করতে পারব না? তখন নবীজি (সা.) বলেন, যে সত্তা মদপান হারাম করেছেন তিনি তা বিক্রি করাও হারাম সাব্যস্ত করেছেন।’ (মাযমাউজ যাওয়ায়েদ : ৪/৯২
উপরন্তু ইসলাম মাদকসেবন হারাম সাব্যস্ত করেছে। অতএব মানুষেরা যদি ইসলাম মেনে চলে তা হলে মাদক থেকে দূরে থাকবে। অনুরূপভাবে, ইসলাম মাদক বেচাকেনার প্রতি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। অতএব ইসলাম মেনে চলার মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা এর বিক্রি থেকেও বিরত থাকবে। ফলত মাদক সেবক ও বিক্রি বহুলাংশে কমে যাবে এবং সমাজের বুকে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে। অতএব স্থিতিশীলতার স্বার্থে প্রয়োজন ইসলাম নির্দেশিত পথে জীবন পরিচালনা করা। কেননা একমাত্র ইসলামেই রয়েছে প্রকৃত শান্তি ও নিরাপত্তা। ব্যক্তি ও সমাজ সুরক্ষায় মহান আল্লাহ প্রদত্ত জীবনব্যবস্থার প্রতি সবাইকে সচেতন হতে হবে। জীবন বরবাদকারী মাদক নিয়ন্ত্রণে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। পরিবারকে ইসলামের আলোয় রাঙিয়ে তুলতে হবে। তা হলেই মাদক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। মহান আল্লাহ সবাইকে সেই তওফিক দান করুন। আমিন।সময়েরআলো