নারীর ক্ষমতায়ন বেড়েছে প্রশাসনে

সরকারের শক্তিশালী জনপ্রশাসন গড়ার উদ্যোগে নারীরা রয়েছেন প্রাধান্যশীল ভূমিকায়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র থেকে জানা গেছে, প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয় থেকে শুরু করে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে নারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। এদিকে পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে ১ লাখ ৮৯ হাজার ৭৯৯ জন পুলিশ সদস্যের মধ্যে নারী পুলিশ সদস্য শতকরা ৮ দশমিক ২ ভাগ।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, সরকারের সচিব ও সচিব পদমর্যাদার ৮০ জনের মধ্যে ১০ জনই নারী। ৪৪২ জন অতিরিক্ত সচিবের মধ্যে নারী ৬৩ জন, ৭৭৮ যুগ্ম সচিবের মধ্যে নারী ১০৮ জন, ১ হাজার ৭৩৭ উপসচিবের মধ্যে নারী ৩৩৪ জন, ১ হাজার ৫১২ সিনিয়র সহকারী সচিবদের মধ্যে নারী ৪০৫ জন, গ্রেড-১ পদে ১৪ জনের মধ্যে নারী ৩ জন, ৬৪ জেলা প্রশাসকের মধ্যে নারী ৬ জন, ৪৯০ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মধ্যে নারী ১৫৯ জন ও ভূমি সহকরী কমিশনারের মধ্যে নারী ১২২ জন। পুলিশ সদর দফতর জানিয়েছে, নারী পুলিশ সদস্য হিসেবে ডিআইজি গ্রেড-৩-এ ইউনিটে কর্মরত রয়েছেন ২ জন, অ্যাডিশনাল ডিআইজি-গ্রেড-৪-এ ৩ জন, পুলিশ সুপার গ্রেড-৫-এ মঞ্জুরীকৃত ২ জন ও ইউনিটে ৮০ জন। অ্যাডিশনাল পুলিশ সুপার-গ্রেড-এ মঞ্জুরীকৃত ৫ জন ও ইউনিটে কর্মরত ১২১ জন। সহকারী পুলিশ সুপার গ্রেড-৯-এ মঞ্জুরীকৃত ১০ জন ও ইউনিটে কর্মরত ৯০ জন। ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) গ্রেড-৯-এ মঞ্জুরীকৃত ৪৪ জন ও ইউনিটে কর্মরত ১৪৪ জন। এসআই (নিরস্ত্র) গ্রেড-১০-এ মঞ্জুরীকৃত ৪৩৩ জন ও ইউনিটে কর্মরত ৮৫৮ জন। সার্জেন্ট গ্রেড-১০-এ ইউনিটে কর্মরত ৫৭ জন। এএসআই গ্রেড-১৪-এ মঞ্জুরীকৃত ৫৫০ জন ও ইউনিটে কর্মরত ১ হাজার ১৩৩ জন। এএসআই (সশস্ত্র) গ্রেড-১৪-এ ইউনিটে কর্মরত ৩ জন। নায়েক গ্রেড-১৫-এ মঞ্জুরীকৃত ২৫ জন ও ইউনিটে কর্মরত ২৬১ জন। কনস্টেবল গ্রেড-১৭ মঞ্জুরীকৃত ১ হাজার ৭৯৭ জন ও ইউনিটে কর্মরত ১২ হাজার ৫১৭ জন।

শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান বলেন, বেগম রোকেয়া স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতাসহ সব জায়গায় নারীরা রয়েছেন। তারা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। একসময় ইউনিয়ন পরিষদে সংরক্ষিত নারী সদস্যরা ভোটে জিতে এলেও তাদের চেয়ারম্যানরা কোনো সুযোগ-সুবিধা দিত না। এমনকি কথা বলার সুযোগ দিত না। মূল কথা কোনো মর্যাদা দিত না। কিন্তু এখন সর্বস্তরে নারীরা দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন।

ইউনিয়ন পরিষদ, জেলা পরিষদ ও সিটি করপোরেশনেও নারীরা আসছেন। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেলিনা হায়াৎ আইভী নির্বাচিত হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করেন। তিনি নারীদের মূল্যায়ন করছেন। প্রতিমন্ত্রী দাবি করেন, প্রশাসনে নারীরা তার যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখছেন।

 

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোসাম্মৎ নাজমানারা খানম বলেন, নারীরা সব ক্ষেত্রেই দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছেন। এটি অবশ্যই ইতিবাচক। এখন সচিব থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অধিদফতর, সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশবাহিনীতেও নারীরা বিচক্ষণতার পরিচয় দিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে নারীরা আজ সবখানে এগিয়ে রয়েছেন।

পরিকল্পনা কমিশনের সচিব মোসাম্মৎ নাসিমা বেগম বলেন, ইতোমধ্যে নারীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখেছেন। নারী জাগরণ শুরু হয়েছে। মূলত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরেই এ জাগরণ শুরু হয়েছে। তবে নারীদের আরও বেশি এগিয়ে আসা প্রয়োজন। একই সঙ্গে পরিবারেরও সাপোর্ট প্রয়োজন।

বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাধবী রায় সময়ের আলোকে বলেন, আমরা তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করছি। সাধারণ মানুষ এসে তাদের সুখ-দুঃখের কথা বলেন। আমরা চেষ্টা করি চাওয়াগুলো পূরণ করার। একজন পুরুষ সহকর্মীর সঙ্গে সঙ্গে সমানতালে একজন নারীও কাজ করছেন। ফলে নারীদের এ জাগরণ দেখে আরও ৫ জন নারী উৎসাহ পাবেন।

 

উজিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রণতি বিশ্বাস বলেন, নারীদের এগিয়ে আসার ক্ষেত্রে বাবা-মাকেও উৎসাহ দিতে হবে। তবে বাল্যবিয়ে রোধ করা খুবই জরুরি। কারণ বাল্যবিয়ে হওয়ার কারণে অনেক নারীর মেধা ও যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও এগোতে পারে না। এ জন্য সরকারের সঙ্গে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

সময়েরআলো