
মোহাম্মদ মজিবুলহক: টাইম ভিশন২৪ পরিবারের সকল সদস্য, পাঠক, শুভানুধ্যায়ী তথা দেশবাসীকে পবিত্র ঈদুল আযহা’র আগাম শুভেচ্ছা, মুসলমানদের বাৎসরিক দুইটি বড় উৎসব এর একটি কোরবানির ঈদ পবিত্র ঈদুল আযহা।
১০ই জুলাই রোববার বাংলাদেশে পবিত্র ঈদুল আযহা অনুষ্টিত হবে, ঈদুল আযহার অন্যতম বিষয় পশু কোরবানি। কোরবানি একটি ইবাদত, ইসলামের সকল ইবাদত ও বিধানই মানুষের জন্য কল্যাণকর। এই কল্যাণ জাগতিক এবং পরকালীন। কোরবানির সঙ্গে জড়িয়ে আছে মুসলিম মিল্লাতের পিতা হযরত ইব্রাহিম ( আঃ) ও তার শিশুপুত্র ইসমাইলের ত্যাগ ও উৎসর্গের অনুপম-অনন্য ইতিহাস।
মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে হযরত ইব্রাহিম (আঃ) ওপর নির্দেশ এলো তার প্রিয় পুত্র কুরবানির বা উৎসর্গের। পুত্র ইসমাইল পিতা হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর ছুরির নিচে মাথা পেতে দিলেন। উৎসর্গ, স্রষ্টার দাসত্ব আর আত্মসমর্পণের এর চেয়ে বড় উদহারণ আর কী হতে পারে! পিতা-পুত্র একই চেতনা আর প্রেরণায় উজ্জীবিত। হযরত ইব্রাহিম (আঃ) ছুরি চালালেন একান্ত প্রিয় শিশুপুত্র ইসমাঈলের গলায়। আল্লাহ্পাকের উদ্দেশে পিতা-পুত্রের ত্যাগের কি অনন্য দৃষ্টান্তে আল্লাহ খুশী হন। আল্লাহর কুদরতে পুত্রের বদলে কোরবানি হয় পশু। প্রিয়বস্তু উৎসর্গের চরম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন হযরত ইব্রাহিম (আঃ)।
এই অনন্য ত্যাগের মহিমাকে স্মরণীয় করে রাখা হয়েছে ঈদে পশু কোরবানির মাধ্যমে। পিতা-পুত্রের সেই অমর স্মৃতিকে মানব জাতির ইতিহাসে জাগিয়ে রাখতে প্রতিবছর তাদের অনুসরণে পশু কোরবানির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আগত ঈদুল আযহা’য় সারা বিশ্বের মুসলমানরা পুরনো ঐতিহ্যের পুনরাবৃত্তি করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে যার যার সাধ্যমতো পশু কোরবানি করবে। ঈদুল আযহা একদিকে ত্যাগের পরীক্ষা অন্যদিকে আনন্দের উৎসব। পশু কোরবানি দেয়া সামর্থ্যবান মুসলিমের ওপর ওয়াজিব।
পশু কোরবানির মাধ্যমে ত্যাগ আর উৎসর্গের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মহান আল্লাহ্পাকের সন্তুষ্টি অর্জনই কোরবানির মূল উদ্দেশ্য। কোরবানি দেয়া পশুর রক্ত-মাংস কিছুই স্রষ্টার কাছে পৌঁছে না, শুধু পৌঁছে তাকওয়া । অনেক মুসলিম এটি বুঝতে না পেরে ত্যাগের উৎসবকে ভোগ আর প্রদর্শনীর মহড়ায় পরিণত করে। অন্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে বা মানুষের বাহবা কুঁড়ানোর জন্য কোরবানির বড় পশু কেনাটা অর্থ-বিত্তের উৎকট প্রদর্শনী বৈ অন্য কিছু নয়। এটা ধর্ম ও ত্যাগ কোনটিই নয়। এটা ভোগ আর প্রদর্শনী।
বিত্তের প্রতিযোগিতা নয়, বৈভবের প্রদর্শনী নয়, ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্য বজায় রেখে কোরবানি করাই আসল কোরবানি। পশু জবাইয়ের সঙ্গে সঙ্গে মনের পশুকেও কোরবানি দিতে পারলেই ত্যাগের পরীক্ষায় পাস করে স্রষ্টার সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়।
তবে, এক শ্রেণীর মানুষ তাদের লোভ আর ভোগের পেয়ালা উপচে পড়ে! এরা কি লোভকে দমন করে ভোগকে কমিয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াবে? যদি না দাড়ায় তাহলে তার পশু কোরবানি বৃথা। যে আল্লাহ্ পাকের উদ্দেশ্যে কোরবানি তার অভুক্ত-অসহায় বান্দার প্রতি মমতা ও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া ঈদুল আযহা’র অন্যতম শিক্ষা। ঈদুল আযহা দরদী সমাজ আর মানবিক পৃথিবী গড়ায় মানুষের ভেতরের পশুত্বকে দমিয়ে মনুষ্যত্বকে জাগিয়ে তুলুক।
লেখক: কবি ও কলামিস্ট
উপদেষ্টা: timevision24
