
তামিম ইকবাল বোধ হয় হাঁফ হেড়েই বাঁচলেন। জিম্বাবুয়ে সফরে ফেবারিট হিসেবে নেমেও যে পুরো কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল তার দল। স্বাগতিকদের কাছে আগেই সিরিজ হারার পর ছিল হোয়াইটওয়াশের চোখরাঙানি। তবে তিন ম্যাচ সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে অবশেষে স্বস্তির জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।
আগে ব্যাট করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২৫৬ রান সংগ্রহ করেছিল বাংলাদেশ। জবাবে জিম্বাবুয়ের ইনিংস টিকেছে ৩২.২ ওভার। অল আউট হওয়ার আগে স্বাগতিকদের সংগ্রহ ছিল ১৫১ রান। টাইগারদের জয় ১০৫ রানে।
হারারের স্পোর্টস ক্লাব মাঠে আগে ব্যাট করে জিম্বাবুয়েকে বড় লক্ষ্য দিতে পারেনি বাংলাদেশ। জিততে হলে তাই দায়িত্ব নিতে হতো বোলারদেরই। সেই লক্ষ্যে শুরুটা ভালো এনে দেন হাসান মাহমুদ। রান তাড়া করতে নামা জিম্বাবুয়েকে প্রথম ধাক্কা দিলেন এই পেসার।
জিম্বাবুয়ের ওপেনার কাইতানোকে ফিরিয়ে দিলেন হাসান। এর পর দ্বিতীয় ওভারে মিরাজ তুলে নেন আরেক ওপেনার টাডিওনাশে মারুমানির উইকেট।
এরপর চমক দেখালেন অভিষিক্ত ইবাদত হোসেন। ওয়ানডে অভিষেকে নিজের দ্বিতীয় ওভারে এসেই টানা দুই বলে তিনি নিলেন ২ উইকেট।
দুটি ডেলিভারিই ছিল দুর্দান্ত। প্রথমে ইবাদতের ব্যাক অব লেংথে কিছুটা লাফিয়ে ওঠা বলে পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ধরা পড়েন মাধেভেরে (১)। পরের বলে ওয়াইড ইয়র্কারে ব্যাটে লেগে বোল্ড হন তুমুল ফর্মে থাকা সিকান্দার রাজা। গত দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি হাঁকানো রাজা আজ পান গোল্ডেন ডাকের তেতো স্বাদ।
নবম ওভারে ইনোসেন্ট কাইয়াকে বিদায় করেন তাইজুল ইসলাম। পাওয়ার প্লেতে ৩২ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় জিম্বাবুয়ে। সেই চাপ কাটিয়ে আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি স্বাগতিকরা। শেষ পর্যন্ত ১৫১ রানে থামে জিম্বাবুয়ে।
বল হাতে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৪টি উইকেট নিয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান। ৩৮ রান খরচায় দুই উইকেট নিয়েছেন ইবাদত হোসেন। ৩৪ রান দিয়ে দুটি উইকেট নিয়েছেন তাইজুল ইসলাম। সমান একটি করে নিয়েছেন হাসান মাহমুদ ও মেহেদী হাসান মিরাজ।
এর ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে স্কোরবোর্ডে ২৫৬ রান তুলেছে তামিম ইকবালের দল। ব্যাট হাতে সর্বোচ্চ ৮১ বলে ৮৫রান করেন আফিফ হোসেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭৬ রান করেছেন এনামুল হক বিজয়। ৭১ বলে তাঁর ইনিংসে ছিল ৬টি বাউন্ডারি ও ৪টি ছক্কা।
আগে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা বেশ সতর্কই করেন দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও এনামুল হক বিজয়। কিন্তু দুজন পারলেন না জুটি বড় করতে। রান আউট হয়ে তামিম ফিরলে ভাঙে ওপেনিং জুটি। ৩০ বলে ৩ চারে ১৯ রান করে বিদায় নেন তিনি।
তামিম ফেরার পরপর আরো দুটি ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। এক ওভারেই হারায় নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুশফিকুর রহিমের উইকেট। দশম ওভারে পেসার ব্র্যাড ইভান্সের শর্ট বল লাফিয়ে উঠে কাট করতে গিয়ে ধরা পড়েন শান্ত। গোল্ডেন ডাকেই সাজঘরের পথে হাঁটেন তিনি।
একই ওভারে মুশফিকও শর্ট বল আপার কাট করেন। বল হাওয়ায় ভেসে যেতে থাকে বাউন্ডারির দিকে। কিন্তু থার্ডম্যান থেকে অনেকটা দৌড়ে এসে দারুণ ক্যাচ নিয়ে মুশফিককে থামিয়ে দেন এনগারাভা। মুশফিকও রানের খাতা খুলতে পারেননি।
দ্রুত তিন টপ অর্ডারের বিদায়ে চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। সেখান থেকে উদ্ধার করতে কিছুটা লড়াই করেন এনামুল হক বিজয়। তাঁকে সঙ্গ দেন মাহমুদউল্লাহ। এই জুটিতে বাংলাদেশ পায় ৯০ বলে ৭৭ রান।
২৫তম ওভারে এই জুটি ভাঙে জিম্বাবুয়ে। ডানহাতি পেসার লুক জঙ্গুয়ের অফ স্টাম্পের বাইরের বলটি এনামুলের ব্যাটের কানা ছুঁয়ে কিপারের গ্লাভসে চলে যায়। ৭১ বলে ৬ চার ও ৪ ছক্কায় ৭৬ রানে শেষ হয় তাঁর ইনিংস।
এনামুল ফেরার পর উইকেটে টিকে থেকে ডট বলের মহড়ায় চাপ বাড়িয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। মাত্র ৩৯ রান করতে তিনি খেলেছেন ৬৯টি ডট বল।
মাহমুদউল্লাহ ফেরার পর শেষ দিকে বাকিদের নিয়ে কোনো মতে বাংলাদেশকে ২৫৬ রানের পুঁজি এনে দেন আফিফ হোসেন।
তিন ম্যাচের এই ওয়ানডে সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতল জিম্বাবুয়ে। এর আগে তিন ম্যাচের টি-২০ সিরিজও একই ব্যবধানে জিতেছিল তারা।
